Saturday, October 5, 2013

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ২০টি উপায়


আপনি যত টাকাই আয় করেন না কেন, একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করার পর আপনাকে এর কারণে কর দিতে হয়। যাকে বলা হয় আয়কর। আর এই আয়করের বেশির ভাগ অংশই খরচ হয় দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর পেছনে। কেননা বিপদে এরাই সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঠিক এ রকমভাবেই আপনার শরীরেও রয়েছে প্রতিরক্ষাবাহিনী এবং একেও নানাভাবে হাতে রাখতে হয়। যাতে করে এরাও সময়মতো কাজে লাগতে পারে। ব্যাপারটা একটা উদাহরণ দিলে ঠিকমতো বোঝা যাবে। যেমন ধরুন আপনি জনবহুল একটি এলাকা দিয়ে যাচ্ছেন। এমন সময় আপনার পাশেই কেউ একজন ‘হ্যাচ্চোও’ করে একটি হাঁচি দিল। সঙ্গে সঙ্গে আপনার ত্বকের জীবাণুবিরোধী উপাদান এবং আপনার মুখ ও নাকের মিউকাস পর্দা ছাঁকনির মতো জীবাণুগুলোকে আটকে ফেলতে চেষ্টা করে। এই ছাঁকনি যদি ঠিকমতো কাজ করতে না পারে তাহলে জীবাণুগুলো আপনার শরীরে প্রবেশ করে এবং আপনার কোষে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে নিজ বংশবৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা চালায়।
ঠিক তেমনি আপনার অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ শুরু করে। আপনার প্লীহা এবং নাসিকার ‘নড’গুলো সাহায্য চায় ‘শ্বেত রক্তকণিকা’-এর কাছে। ‘শ্বেত রক্তকণিকা’ যাকে ‘টি সেল’ও বলা হয়ে থাকে তারা ভাইরাসগুলোকে খুঁজে বের করে এবং মেরে ফেলার চেষ্টা করে এবং যদি তারা না মারতে পারে তাহলে এগিয়ে আসে ‘বি-সেল’। এই বি-সেল আবার বলা হয় ‘ইমিউনোগ্লোবিউলিন’ যা অ্যান্টিবডি হিসেবে রোগজীবাণুগুলোকে চিহ্নিত এবং নিষিক্রয় করে। আর ঠিক এই জায়গাতেই টিকা বা ভ্যাকসিনগুলো কাজে আসে। মানে ঠিক করে বলতে গেলে টিকা বা ভ্যাকসিনের মাধ্যমে শরীরে যে অর্ধমৃত জীবাণুগুলো ঢোকানো হয় ওই জীবাণুগুলোকে এই বি-সেল এবং টি-সেল চিনে রাখে। এবং পরবর্তী সময়ে এই জীবাণুগুলো আবারো শরীরে যদি প্রবেশ করে তবে এই সেলগুলো ওই জীবাণুগুলো তড়িৎ গতিতে চিনে ফেলে এবং তাড়াতাড়ি মেরে ফেলে। আর আপনাকে রাখে রোগমুক্ত। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আপনার জন্য এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক কতখানি জরুরি। এবার তবে আপনাকে জানাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার ২০টি নয়া এবং সহজ তরিকা। যেগুলো বলেছেন বিশ্ববিখ্যাত সব বিজ্ঞানী, নানা সমীক্ষা চালানোর পর।
১. আপনজনের সঙ্গে বিশেষ করে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন
‘ফিলিং গুড হাউ প্লেজার কেন বুস্ট ইউর ইমিউন সিস্টেম অ্যান্ড লেন্থেন ইউর লাইফ’-এর সহলেখক বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ‘কার্ল চারনেটক্সি’-এর মতে, মাঝেমধ্যে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বলা ভালো। কেননা বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার সময় আপনি যে হাসাহাসি করেন এবং এতে করে আপনার শরীরের ‘কর্টিসোল’ নামক হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়, যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
২. কলিজা খান
যেকোনো রকম কলিজাই সেলোনিয়াম, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, কপার, ফলিক এসিড, ভিটামিন-বি৬, এবং ভিটামিন বি-১২ দ্বারা সমৃদ্ধ। যা আপনার শরীরের বি-সেল থেকে ইমিউনোগ্লোবিউলিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। আপনার শরীরে জীবাণু চিহ্নিত করার কাজটি অতি দ্রুত সমাধা করে।
৩. শব্দ-জব্দজাতীয় খেলা খেলুন
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ইন্টেগ্রেটিভ বায়োলজি বিষয়ের অধ্যাপক ম্যারিঅ্যান ক্লিভসের মতে, শব্দ-জব্দ অথবা পাজল কিংবা এমন কোনো খেলা যাতে মাথা ঘামাতে হয় তা সম্ভব হলে রোজ খেলা উচিত। কেননা এতে করে অনেক সময় টি-সেলের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৪. সকালের নাশতাতে শস্যদানার পরিমাণ বাড়ান
শস্যদানা, বিশেষ করে ভুট্টা, বার্লি এবং কর্নফ্লেক্স এ জাতীয় খাবারের মাঝে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও ‘ফাইটোঅ্যাসট্রোজেনস প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। যা ক্যান্সার, হার্টের অসুখ ও ব্রেস্ট টিউমার রোধে বিশেষ সহায়ক। এছাড়া ‘ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড’ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ক্ষত শুকানোর ক্ষমতা বাড়ায়।
৫. বাড়ির পরিবেশ শুষক রাখুন
টরেন্টোর উইমেনস কলেজ হেলথ সায়েন্স সেন্টার ও এনভায়ারোনমেন্টাল হেলথ ক্লিনিকের সানিব্রুক-এর প্রধান ড. লিন মার্শালের মতে, স্যাঁতসেঁতে দেয়াল ও কার্পেট থেকে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৬. নিরাপদ যৌনমিলন করুন
সপ্তাহে একবার কিংবা দুইবার যৌনমিলনের ফলে শরীরে উচ্চমানের ইমিউনোগ্লোবিউলিন-এ বি-সেল থেকে নিঃসরিত হয়-যা একটি উচ্চমানের অ্যান্টিবডি। তবে যৌনমিলনটি অবশ্যই নিরাপদ হতে হবে।
৭. যতটা সম্ভব চোখ বন্ধ রাখুন
ঘুমিয়ে থাকলে আপনার শরীরের বিশেষ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যক্ষম হয়। তাই যদি আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে না পারেন তাহলে অবসর সময়ে টিভি না দেখে চোখ বন্ধ করে রাখুন।
৮. অন্তত খাবারের ব্যাপারে মুখ সামলে রাখুন
খাবারের ব্যাপারে যত্নবান হোন। যা খুশি তাই, যখন খুশি তখন খাবেন না। পারলে অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। কেননা এ দ্বারা শরীরে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হতে পারে। আর উপকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্য পারলে রোজ টকদই খান।
৯. লৌহ খান, মেপে
১৫-৪৫ বছর বয়সী মহিলাদের মাসে আয়রন বা লৌহের অভাব প্রবলভাবে দেখা যায়। তাই তাদের যে পরিমাণে লৌহ দরকার হয় অন্য কারো এতটা প্রয়োজন হয় না। তাই অন্য সব বয়সী প্রতিদিন ৪৫ মিলিগ্রামের বেশি লৌহ খাবেন না। কেননা অতিরিক্ত লৌহ বিষে রূপান্তরিত হতে পারে।
১০. পানীয় নয়, পানি খান
পানি আপনার শরীরে ছাঁকনি হিসেবে কার্যরত মিউকাস পর্দাকে আর্দ্র ও কার্যক্ষম করে। তাই অন্য সব পানীয় কম খেয়ে যতটা সম্ভব বিশুদ্ধ পানি খান।
১১. সকালে ভাত খাওয়া পরিহার করুন
তিনবেলাই ভাত খাওয়ার অভ্যাসটা কমিয়ে আনুন। তার বদলে লাল আটার রুটি খান। কেননা এর মাঝে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম ও জিংক রয়েছে।
১২. মাঝে মাঝে হাসির নাটক-সিনেমা দেখুন
উচ্চস্বরে হাসি আপনার রক্তচাপ কমায় এবং কর্টিসোল হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে। এর ফলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই মাঝে মাঝে হাসির বই পড়ুন কিংবা সিনেমা-নাটক অথবা কার্টুন দেখুন।
১৩. মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন
যতটা সম্ভব মদ থেকে দূরে থাকুন। একেবারেই যদি না পারেন তাহলে রেড ওয়াইন খান। তবে অবশ্যই অল্প পরিমাণে। কেননা একমাত্র এই মদটি থেকেই কিছু পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়।
১৪. নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করুন
প্রতিদিন ৪৫ মিনিট আর সপ্তাহে পাঁচদিন হাঁটতে বের হন। এতে করে আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা চাঙ্গা হয়ে উঠবে ও পাশাপাশি আপনার রক্তচাপও কমবে। হাঁটার পাশাপাশি পারলে গান শুনুন। কেননা সমীক্ষায় দেখা গেছে, গান অথবা সুরেলা আওয়াজ আপনার ইমিউনোগ্লোবিউলিনের নিঃসরণ মাত্রা কদাচিৎ বাড়ায়।
১৫. হতাশা থেকে দূরে থাকুন
হতাশা অথবা অবসাদ আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই একটানা কাজ না করে মাঝে মাঝে অবসর গ্রহণ করুন এবং তারপরে একবারে মনোযোগ নিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।
১৬. রোদে কম যান
সূর্যের ইউভি-এ ও ইউভি-বি আপনার সেলের ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ও ত্বকের রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান নষ্ট করে দেয়। তাই যতটা সম্ভব কম রোদে যান। আর গেলেও ছায়াতে থাকার চেষ্টা করুন।
১৭. সামুদ্রিক খাবার খান
সামুদ্রিক খাবারে প্রচুর পরিমাণে লোহা, জিংক, সেলেনিয়াম, কপার ও ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়। যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই সুযোগ পেলেই সামুদ্রিক খাবার খান।
১৮. শরীরে ম্যাসাজ করুন
সুযোগ পেলে শরীরে ম্যাসাজ করুন। কেননা এতে করে আপনার ত্বকের রোগ প্রতিরোধকারী উপাদানগুলো চাঙ্গা হয়।
১৯. নামাজ পড়ুন
নামাজ পড়ুন অথবা ধ্যান করুন। কেননা এতে আপনার অবসাদ দূর হবে। তাই একে জীবনের একটি অঙ্গ বানিয়ে ফেলুন।
২০. সমস্বরে গান করুন
গলা খারাপ হলেও কারো তোয়াক্কা না করে মাঝে মাঝে জোরে জোরে গান করুন। কেননা এতে করে আপনার ইমিউনোগ্লোবিউলিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

0 comments:

Post a Comment

 
Copyright © . ডাক্তারের পরামর্শ - Posts · Comments
Theme Template by BTDesigner · Powered by Blogger